শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন

দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। গত শনিবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে আগের মতোই কতগুলো গৎবাঁধা প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি হয়েছে মাত্র। বলা হয়েছে, সীমান্তের যেকোনো ঘটনায় মানবাধিকারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে দুই বাহিনী যৌথভাবে টহল দেবে, অপরাধ বন্ধে একসাথে কাজ করবে।
এই সম্মেলন এমন একসময় অনুষ্ঠিত হলো যখন চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক। গত বুধবার যখন বিএসএফ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে যোগ দিতে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছিল, সেই সময়ও দিনাজপুরের বিরল সীমান্তে পড়ে ছিল এক বাংলাদেশীর লাশ। আর বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ১২ জন বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যু হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে। ২০১৯ সালে ভারতীয় বাহিনীর গুলি অথবা নির্যাতনে প্রাণ হারান ২৮ বাংলাদেশী। এসব পরিসংখ্যান বলে দেয়, ভারতের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার কতটা ঠুনকো। এর আগেও বহু সম্মেলনে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে বারবার আলোচনা হলেও এ হত্যা বন্ধ হয়নি। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও একই ধরনের নিষ্ফল অঙ্গীকারের মহড়া আমরা দেখেছি। এমনকি বিএসএফকে প্রাণঘাতী অস্ত্র বহন থেকে বিরত রাখা হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও আমরা শুনেছি বিভিন্ন সময়ে। কাজের কাজ এই হয়েছে যে, বাংলাদেশীদের জীবনের দাম আরো কমেছে, তাদের দেখামাত্র পাখির মতো গুলি করে মারছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। প্রতিটি হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ প্রতিবাদ করেছে; বিজিবির পক্ষ থেকে বা সরকারি পর্যায়ে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো প্রতিবাদ, উদ্বেগ বা অনুরোধ মোটেও কাজে আসছে না। অথচ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধাবস্থা নেই বরং পারস্পরিক সম্প্রীতি আর সুসম্পর্ক নিয়ে দুই দেশের সরকারই বুক ফুলিয়ে গর্ব করে থাকে। তার পরও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হলো, মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী’ সীমান্ত। এ পরিস্থিতি কেন, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
অনেকের মতে, এই প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে আছে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের নীতির ভেতরে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি যে ভারতের অনুকূল ও আনুগত্যের তা বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে গত এক দশকে আমাদের মন্ত্রীদের মন্তব্য অনুসরণ করলেই তা টের পাওয়া যায়। দু’টি স্বাধীন দেশের মধ্যে সমমর্যাদার ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে যে সম্পর্ক হওয়ার কথা সেই বিষয়টি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। প্রতিবেশীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং প্রাপ্য আদায় করে নেয়ার যে বৈশ্বিক সংস্কৃতি প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ অনুসরণ করে, বাংলাদেশ সেটি পারছে না। শুরু থেকেই বাংলাদেশ ‘কৃতজ্ঞতার অনিঃশেষ’ জোয়ারে যেন ভাসছে। তাই ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির যতগুলো ক্ষেত্র হাতে আছে তার সবই বাংলাদেশ অচল তাসের মতো নামিয়ে রেখেছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনেও বিএসএফ প্রধান বাংলাদেশের কাছ থেকে এ দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন। অথচ বছরের পর বছর ভারত আমাদের দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী পার্বত্য গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয়, অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ সবই দিয়েছে। বন্ধুত্বের ন্যূনতম পরীক্ষাও ভারতকে এ জন্য দিতে হয়নি। তিস্তার পানিসহ বাংলাদেশের জীবন-মরণ সঙ্কটের ক্ষেত্রেও তারা বন্ধুসুলভ সামান্য উদারতার পরিচয় দিতে পারেনি। এমনই এক পরিস্থিতিতে সীমান্ত হত্যা বন্ধের এই নতুন প্রতিশ্রুতির ওপর কতটা ভরসা করা যায়, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ অমূলক হবে কি? আমরা ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়গুলো তিক্ত বাস্তবতার নিরিখে নিরীক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877